‘করবৈষম্য’ কমিয়ে আনতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শহরের মতো গ্রামের করদাতাদেরও ব্যক্তিশ্রেণির ন্যূনতম আয়কর ৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে-সাধারণ মানুষের করভার লাঘবে করমুক্ত আয়ের সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ন্যূনতম কর বৃদ্ধির বিষয়টি দুইভাবে পর্যালোচনা করা যেতে পারে। গ্রাম ও শহরে আয়ের তারতম্য বিবেচনায় নিলে একাধিক করহার ঠিক আছে। তবে বৈশ্বিকভাবে ন্যূনতম কর বলতে কিছু নেই, সব নাগরিককে সমান হারে কর দিতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম কর হার প্রযোজ্য, নাকি সবার জন্য একক হার, সেটি নির্ধারণে আগে বিস্তর গবেষণা করা যেতে পারে। গ্রামের করদাতাদের ন্যূনতম কর এক লাফে ৫ হাজার টাকা করা হলে আয়করের প্রতি তাদের বিমুখতা তৈরি হতে পারে। এজন্য এনবিআর চাইলে একটি রূপরেখা দিতে পারে। পর্যায়ক্রমে ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা করা যেতে পারে।
অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির কশাঘাতে জর্জরিত স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী বাজেটে বাড়ানো হচ্ছে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা। আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অপরিবর্তিত থাকছে করহার। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয়ের স্তরভেদে ৫, ১০, ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়।
বিগত বাজেটগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এনবিআর কখনোই টানা করমুক্ত আয়ের সীমা কমায়নি। সাধারণত ২-৩ বছর বিরতিতে আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। ২০২০-২১ সালে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়। সাধারণ করদাতাদের বাইরে নারী করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের করদাতাদের করমুক্ত সীমা ৫ লাখ টাকা।
এনবিআর মনে করে, করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়লে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবে। মূল্যস্ফীতি বাড়লেও সেই সঙ্গে আনুপাতিক হারে মানুষের আয়ও বেড়েছে। তাই ঢালাওভাবে সীমা বাড়ানোকে যৌক্তিক মনে করে না সংস্থাটি।
ড. মাশরুর রিয়াজ বলেন, মূল্যস্ফীতির অভিঘাতে স্বল্প আয়ের মানুষ জর্জরিত। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে করমুক্ত আয়ের সীমা ১২ লাখ রুপি। সেটি বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশে ৪ লাখ টাকার বেশি হওয়া উচিত। করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলেও সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।