বিদ্বেষ থেকে এনবিআর ভাগ হলে ভয়ংকর পরিস্থিতি হবে!

এনবিআরকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ঠিকঠাক প্রতিফলিত হয়নি বলে মনে করেন মো. ফরিদ উদ্দিন। পরামর্শক কমিটির এ সদস্য ও এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলছেন, অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে এনবিআর কর্মীরা আন্দোলনে নামার ফলে এখন যদি বিদ্বেষ থেকে সংস্থাটিকে দুই ভাগ করা হয়, তাহলে তা জাতির জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করবে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার গুলশানে এনবিআর সংস্কার বিষয়ক গোলটেবিলে তিনি এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ (পিইবি) এ বৈঠক আয়োজন করে।

গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। পরের দিন থেকে আন্দোলনে নামেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা। অবস্থান, কলমবিরতিসহ কর্মবিরতির মতো টানা কর্মসূচি পালন করেন তারা। তাদের দাবি ছিল, প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে আসা সচিবদের যেন না বসানো হয়। এর পরিবর্তে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের অভিজ্ঞদেরকেই যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের দাবির মুখে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে সরকার। তখন সরকারের তরফে সংশোধনের কথা বলা হয়। পরে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে যে দুই ভাগ করা হচ্ছে, সেগুলোর শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে সংশোধিত অধ্যাদেশে।

এটিসহ ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর সংশোধনে ১১টি পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক কমিটির কোন সুপারিশ অধ্যাদেশে রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে ফরিদ উদ্দিন একটি কাগজ তুলে ধরেন এবং সবাইকে পাঠাবেন বলে জানান।

সংস্কার কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘সরকার যে অধ্যাদেশটা দিয়েছে, তাতে কী বলা আছে, আমি এই শিটে বলেছি। আর কী হওয়া উচিত, তাও আমি কিন্তু এক পাশে দিয়েছি। এই নথিটা আপনাদের পড়া উচিত, এটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। কারণ এখানে যদি ভুল হয়, যদি ভুল সরকার করে বা এই দুই বিভাগের সমন্বয়টা কীভাবে হবে, এই সমন্বয় যদি ভুল হয়, তাহলে কিন্তু এখন যে অবস্থা আছে, তার চেয়ে ‘ভয়ংকর’ পরিস্থিতি হবে।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এখন তো একটা জায়গা আছে (এনবিআরের), কিন্তু এখন যদি ওটা একটা বিউরোক্র্যাসি হয়, আর এটা (এনবিআর) যদি আলাদা হয়, তাহলে পরিস্থিতি আপনাদের জন্য আরও ভয়াবহ হবে। কাজেই ভুলটা যেন না হয়, সেজন্য আমি অনুরোধ করি, আপনারা এটা পড়েন। পড়ার পর আপনাদের মতামতটা সরকারকে দেন। বিভিন্ন ফোরামে কিংবা সংবাদমাধ্যমে সবকিছু জানান।

প্রতিবেদনের ওপর ব্যবসায়ীদের মতামত চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের সবার কথা নিয়ে একসঙ্গে সরকারকে দিয়ে দেই। অর্থাৎ পরবর্তীকালে সরকার যখন না শুনতে যাবে, আপনারা খুব বড় গলায় বলতেও পারবেন যে, সংস্কারটা দেওয়া হয়েছিল, কী করলেন? এজন্য কিন্তু আমরা এটা পার্টিসিপেটরি করার চেষ্টা করেছি। এনবিআর সংস্কার এখন যেভাবে করা হচ্ছে, তা আসলেই ব্যবসায়ী সমাজ চাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রচুর বিভ্রান্তি রয়েছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ।

নিহাদ কবিরের মতো পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, সংস্কারে এ কমিটি চমৎকার ইনেশিয়েটিভ ছিল। তারা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ দিয়েছে। তবে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারের মধ্যে আগ্রহের অভাব দেখা যাচ্ছে। পৃথক যেভাবে করা হচ্ছে, তা সরকারের ‘রাইট ডিসিশন’ কিনা, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এই পৃথকীকরণ ইফেক্টিভ না হলে এখন তো এক জায়গায় হ্যাসেল হয়, তখন দুটি আলাদা বিভাগে টু স্টেপ হ্যাসেল হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *