সংস্কারের মাঝেই হঠাৎ এনবিআর সংস্কার পরামর্শক কমিটি বিলুপ্ত!

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার কমিটির কার্যক্রম হঠাৎ করেই সমাপ্ত ঘোষণা করেছে সরকার। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রণালয়ের ইন্টারনাল রিসোর্স ডিভিশন (আইআরডি) এক আদেশে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

আদেশে বলা হয়, রেভিনিউ পলিসি এবং রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট পৃথকীকরণ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর এনবিআর সংস্কার পরামর্শক কমিটির কার্যক্রম সমাপ্ত হলো।

তবে এদিকে, কমিটির সদস্যরা বলছেন, তাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তারা প্রতিবেদন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং সেটি সরকারের কাছে জমা দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে কমিটি ভেঙে দেওয়ায় তারা বিস্মিত হয়েছেন।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এনবিআরের কমিটির এক সদস্য মন্তব্য করেন, অধ্যাদেশ অনুযায়ী সংস্থাটিকে দুটি ভাগে— রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ভাগ করলে তা জাতির জন্য ‘ভয়ংকর পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করতে পারে। ফরিদ উদ্দিন নামের ওই সদস্য বলেন, “আমরা কমিটি থেকে যে সুপারিশ দিয়েছি, তা সেভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। যদি ভুলভ্রান্তি কোনও বিদ্বেষ থেকে বা অযাচিতভাবে করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হবে।’’

এ কমিটি গত বছরের অক্টোবর মাসে এনবিআরের সংস্কার ও রাজস্বনীতি উন্নয়নের জন্য গঠিত হয়েছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল— সংস্থার প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন সংস্কার, শুদ্ধাচার ও সুশাসনের কাঠামো তৈরি, নাগরিক যোগাযোগ এবং অংশীজন সম্পৃক্ততা বাড়ানো। তবে সংস্থাকে দুটি ভাগে করার বিষয়টি কমিটির মূল কাজের মধ্যে ছিল না।

চলতি বছরের ১২ মে রাতের মধ্যেই সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে এনবিআরের কার্যক্রম পৃথক করে। এর পরের দিন থেকেই কর্মীরা অবস্থান, কলমবিরতি ও কর্মবিরতির মতো কর্মসূচি শুরু করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সদস্য বলেন, “কমিটি কার্যক্রম সমাপ্তের ঘোষণার আদেশ দেখে মনে হলো এনবিআর পৃথকীকরণই তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “এর মাধ্যমে বোঝা গেল, সংস্কার নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা কতটা সীমিত। অথচ কমিটির টার্মস অব রেফারেন্সে এনবিআর পৃথকীকরণের পাশাপাশি আরও চারটি বিষয় ছিল—সংস্কার কীভাবে হবে, রাজস্ব আদায় কীভাবে বাড়বে, অংশীজনের সম্পৃক্ততা এবং রাজস্ব ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। অথচ সেপারেশনের পর এসব বিষয়ে মতামত নেওয়ার আগেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো। যাই হোক, আমরা আমাদের খসড়া প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে জমা দেব।”

উল্লেখ্য, সরকারের অন্যান্য সংস্কার কমিটি গঠিত হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। তবে এনবিআর সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছিল আইআরডির আদেশে।

অন্যদিকে, এনবিআর পৃথকীকরণ বিষয়ে কমিটির দেওয়া সুপারিশ এখনো সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *