এনবিআরে আসছে বড় সংস্কার,করজালে কর ফাঁকিবাজ

►তিন মাসে শীর্ষ অনেক কর ফাঁকিবাজ করজালে ► আরো বহু ফাঁকিবাজের বিরুদ্ধে হচ্ছে মামলা ► সক্ষমতা বাড়াতে নিয়োগ হচ্ছে বিপুল জনবল

গত সাড়ে ১৫ বছরে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর আমূল বদলে গেছে চিত্র। রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে বড় সংস্কারের পথে হাঁটছে এনবিআর।

৫ আগস্ট হাসিনার দেশ ত্যাগের পর তিন মাসে শীর্ষ ১৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। আরো অনেক কর ফাঁকিবাজের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিআইসি। এই সংস্থা ছাড়াও পৃথকভাবে কাজ করছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ও মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিন মাসের ব্যবধানে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজের সুযোগ পেয়ে সাবেক সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলা, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ যাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সিআইসি ১৫২ জনের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির মামলা এবং কাস্টমস ও ভ্যাটে ১৫টি মামলা করেছে। তদন্তের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে ৮৭ জন বড় আয়কর খেলাপির মামলা। ৩৭ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার পাশাপাশি খুলে দেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়া, আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ ছয়জনের ব্যাংক হিসাব।

সিআইসি ছাড়াও আয়কর গোয়েন্দা কাজ করছে প্রায় অর্ধশত ব্যক্তির কর ফাঁকির তদন্তে।

কাস্টমস গোয়েন্দা এ সময় শুল্ক ফাঁকির মামলা করেছে ৫৭টি। যার সঙ্গে জড়িত ৩৮.৩৯ কোটি টাকার রাজস্ব। আদায় হয়েছে ৬.৩২ কোটি টাকা। আটক করেছে ৩৯.৭০ কোটি টাকা বাজারমূল্যের ৩৪.১০ কেজি স্বর্ণ, ৫২ হাজার ৯০০ সৌদি রিয়াল, ৩.৮৩ কোটি টাকা মূল্যের ১০ হাজার সাতটি মোবাইল সেট, ৭০ লিটার মাদকদ্রব্য। ভ্যাট গোয়েন্দা ৯৪টি নিরীক্ষা শেষ করে ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে ১৫৯.৬৬ কোটি টাকার।আদায় করেছে ৬১.১৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া তিনটি অভিযানে ৫.৩৩ কোটি টাকা ও ছয়টি অনুসন্ধানে ২.১৮ কোটি টাকা ফাঁকি উদঘাটিত হয়েছে। অন্যদিকে অক্টোবরে ১৫৩ কোটি টাকা সমমূল্যের নকল/ব্যবহৃত ব্যান্ডরোল/ স্ট্যাম্প জব্দ করেছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট।
গোয়েন্দা কার্যক্রম ছাড়াও বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রাজস্ব ছাড় দিয়ে ভোজ্য তেল, ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চাল ও কীটনাশক আমদানির ওপর শুল্ককর ও ভ্যাট কমানো এবং তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংস্কার ও অটোমেশনে চোখ ছিল এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের। রাজস্ব আদায়ের তিনটি অনুবিভাগের (আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট) কর্মচারী-কর্মকর্তাদের জন্য ১৪টি নির্দেশনা ও মনিটরিং, ব্যবসায়ী ও করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরি, রাজস্ব সংস্কারে তিনটি পৃথক কমিটি, অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তি, চট্টগ্রাম কাস্টমের ঝুঁকিপূর্ণ অতিদাহ্য কনটেইনার নিলামে খালাস, বন্ডের অপব্যবহার বন্ধ করার পাশাপাশি ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্য নিয়ে মিথ্যাচার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। আবদুর রহমান শুরুতেই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সব তথ্য-উপাত্ত আইবাস প্লাসপ্লাসের সঙ্গে সংযুক্ত করার নির্দেশনা দেন। মাঠ পর্যায়ে এই সিস্টেমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে তিনি করদাতাদের আহ্বান জানিয়েছেন এবং কল সেন্টারে সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া নিশ্চিত করেন। ভোগান্তিমুক্ত পরিবেশে অনলাইনে তিন মাসে দুই লাখ ৬৯ হাজার করদাতা ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন নিয়েছেন। এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ই-রিটার্ন জনপ্রিয় করতে চার সিটি করপোরেশন, তফসিলি ব্যাংক ও চারটি মোবাইল অপারেটর এবং ছয়টি বহুজাতিক কম্পানির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *