দেশে প্রযুক্তি আছে, ব্যবহারের সুযোগও আছে। তবে অর্থনীতিতে এর প্রভাব বেশ কম। ভবিষ্যৎ ও হাইটেক প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। দক্ষ মানবসম্পদ ও পরিচালনব্যবস্থাও দুর্বল। সব মিলিয়ে প্রযুক্তির প্রভাবের দিক থেকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশ তলানিতে অবস্থান করছে।
২০২৩–এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ সূচক অনুযায়ী, ২০২২ সালের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশ তিন ধাপ পিছিয়েছে।গত নভেম্বর মাসে চলতি বছরের এনআরআই প্রকাশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, ভারত ৬০তম, পাকিস্তান ৯০, নেপাল ১১৪ ও শ্রীলঙ্কা ৮০তম অবস্থানে রয়েছে।
অর্থনীতিতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির (আইসিটি) প্রয়োগ ও প্রভাবের মান নির্ণয় করে এনআরআই। চলতি বছর ১৩৪টি দেশের অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের প্রভাবসহ বিভিন্ন দিক নির্ণয় করা হয়েছে। এ জন্য মূলত প্রযুক্তি, মানবসম্পদ, শাসন ও প্রভাব—এ চারটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এসবের অধীন আরও কিছু মানদণ্ড রয়েছে।
এনআরআই ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম চালু করলেও ২০১৯ সাল থেকে ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পর্তুলান্স ইনস্টিটিউটের অধীন এটি পরিচালিত হচ্ছে।
এনআরআই ২০২৩ অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ ৪১ দশমিক শূন্য ৪ স্কোর পেয়ে ৩ ধাপ পিছিয়ে ৯১তম অবস্থানে রয়েছে। আগের বছর ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৪২ দশমিক ৭৪ স্কোর পেয়ে ৮৮তম অবস্থানে ছিল। বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে ৭৮তম, মানবসম্পদে ৯০, শাসনে ১০০ এবং প্রভাবে ১০১তম হয়েছে।
যে চারটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বর্ণনায় বলা হয়েছে প্রযুক্তি হলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত অবকাঠামো, মানবসম্পদ হলো অত্যন্ত দক্ষ ও উপযোগী কর্মী বাহিনী, শাসনব্যবস্থার অর্থ ডিজিটাল রূপান্তর পরিচালনা করতে সক্ষম ও দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো এবং প্রভাব হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারের ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব।
এ চার বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষ ও উপযোগী কর্মী বাহিনী, অর্থাৎ মানবসম্পদে স্কোর সবচেয়ে কম। ব্যক্তি, ব্যবসা ও সরকার তিনটিতেই বাংলাদেশের প্রাপ্ত নম্বর ৩৫ থেকে ৩৬–এর মধ্যে। শিক্ষায় বাংলাদেশের আইসিটি দক্ষতায় স্কোর ৪০–এর বেশি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মেধাকে সমন্বিত করার মানদণ্ড বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
শাসনব্যবস্থায় বাংলাদেশের আস্থায় স্কোর অনেক কম। তবে সরকারের অনলাইন সেবায় স্কোর ৬১–এর বেশি।বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রযুক্তির প্রভাব কম। এখানে বাংলাদেশের স্কোর ২১ দশমিক ৫৬।এনআরআইয়ের সব মানদণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশ এখানে উল্লেখযোগ্য কম নম্বর পেয়েছে।অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রযুক্তি ব্যবহারে অর্থনীতিতে প্রভাব বাংলাদেশের চেয়ে ভালো।শ্রীলঙ্কার স্কোর ২৯–এর বেশি এবং পাকিস্তানের ৩৬–এর বেশি এবং ভারতে তা ৪৯–এর বেশি।প্রযুক্তিতে প্রবেশের সুযোগে বাংলাদেশের স্কোর ৬৭–এর বেশি, বিষয়বস্তুতে প্রায় ২৩ এবং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে ২৪–এর বেশি।
অর্থনীতিতে প্রযুক্তির প্রভাবে এনআরআই যেসব মানদণ্ড উল্লেখ করেছে তাতে হাইটেক–মিডিয়াম হাইটেক প্রযুক্তি উৎপাদন ও রপ্তানি এবং আইসিটি সেবা রপ্তানিতে বাংলাদেশের স্কোর ১০–এর কম।এনআরআই ২০২৩ অনুযায়ী, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ১৫তম অবস্থানে রয়েছে।অভিগম্যতা, বিষয়বস্তু, সরকার, আস্থা, অন্তর্ভুক্তি ও জীবনমানে নিম্ন-মধ্যম আয়ের অন্য দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো।
তবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশ চার বিষয়ের প্রতিটিতেই অন্য দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে আছে। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের পেছনে আছে শুধু কম্বোডিয়া, লাওস ও নেপাল।