১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নোটিশ পাঠাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)!

ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) থাকলেই আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়সীমা ১৬ ফেব্রুয়ারি। ওই সময়ের মধ্যে যারা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন না, তাদের পরের দিন থেকে অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নোটিশ পাঠাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের নোটিশে রিটার্ন জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হবে। নোটিশ পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে রিটার্ন জমা দিতে হবে। নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে করদাতাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনবিআরের এ সিদ্ধান্তের ফলে করদাতারা হয়রানির শিকার হবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, বর্তমানে এক কোটির বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। তাদের মধ্যে প্রতিবছর ৪০ লাখের বেশি টিআইএনধারী রিটার্ন দেন। এবার জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণে প্রত্যাশিত রিটার্ন জমা পড়েনি।

এনবিআর সূত্র জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা না দিলে জরিমানা করা হবে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করেও সংসার চালিয়ে তিন বেলা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে খাবার তালিকা থেকে অনেক নিয়মিত খাবারও কাঁটছাট করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ করদাতাদের কর পরিশোধ করা ও রিটার্ন জমায় কঠোরতা আনা ঠিক হবে না বরং এনবিআরকে করমুক্ত আয়সীমা আরও বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ধনীরা খুব কৌশলী। তারা নিজেদের আইন বিশেষজ্ঞ দিয়ে খুব কায়দা করে করফাঁকি দেন। এনবিআরের পক্ষে বেশির ভাগ সময় এদের ধরা সম্ভব হয় না। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

করদাতা বেসরকারি চাকরিজীবী সাদ্দাম হোসেন বলেন, মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় করেও সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দুই বছর ধরে কর পরিশোধ ও রিটার্ন জমা কোনোটাই করতে পারিনি। এমন পরিস্থিতিতে কর ও রিটার্ন পরিশোধ করায় কঠোরতা আনা হলে কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।

এ ব্যাপারে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ইটিআইএন থাকার পরও যারা দীর্ঘদিন ধরে রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাদের এনবিআর থেকে শিগগিরই নোটিশ পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, যারা রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। তাই আমরা এ বিষয়ে এনফোর্সমেন্টে যাচ্ছি। আমাদের নাগরিকরা বিদেশে গিয়ে আইন ভঙ্গ করছেন না। কিন্তু দেশে আমরা আইন ভঙ্গ করছি। তার মানে এ সমস্যার সমাধান করতে আইনের প্রয়োগ করা হয় না, এটাই সমস্যা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অনেকে ইটিআইএন গ্রহণ করার পর দুই-এক বছর রিটার্ন দিলেও কোনো কারণ ছাড়াই পরের করবর্ষে আর দেন না। এবার থেকে এসব চলবে না। ইটিআইএন থাকলেই বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে। যারা দেবেন না, তাদের নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে এনবিআর।

রিটার্ন জমার সময় ১৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা। এ সময়ের পর ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ পাঠানোর সময়। থেকে অর্থাৎ ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে কর পরিশোধ ও রিটার্ন জমা দিলে কর অব্যাহতির, করমুক্ত এবং হ্রাসকৃত হারে কর প্রদানের সুবিধা পাবে না। বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত সুবিধাও পাবে না। নিয়মিত করের পাশাপাশি নির্ধারিত হারে জরিমানা দিতে হবে- এক হাজার টাকা। একই সঙ্গে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে জরিমানা করা হবে।

মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর দাবি করলেও বিগত সরকার তা আমলে নেয়নি। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরেও সাধারণ করমুক্ত আয়সীমা আগের মতো ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাখা হয়। ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারী ও প্রবীণ নাগরিকদের করমুক্ত আয়সীমা হবে চার লাখ টাকা, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের জন্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং যুদ্ধাহত গেজেটেড মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা আছে।

বর্তমানে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক করবর্ষে একজন ব্যক্তির আয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলেই তাকে কর পরিশোধ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *